তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ ও তাদের স্মৃতিমালা

স্বামী অভয়ানন্দ

‘তুই শরৎ মহারাজের কাছে যাবি, তাঁকে গিয়ে বলবি

সারদানন্দ স্বামী

তাে তােকে চেনেন ?

বললাম হ্যা মহারাজ, তিনি আমাকে চেনেন

পূজনীয় শশী মহারাজ

(স্বামী রামকৃষ্ণানন্দ) যখন অসুস্থ অবস্থায় উদ্বোধনে ছিলেন, তখন আমি ওখানে ছিলাম

কিছুদিন ওনার  সেবা করেছিলাম

সেই সময়ে স্বামী সারদানন্দ আমাকে দেখেছেন

বাবুৱাম মহারাজ বললেনঃ হ্যা, শরৎ মহারাজ তােকে খুব ভালই চেনেন

তার উপর উনি খুব সন্তুষ্ট

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২
তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

শশী মহারাজের সেবা করলি এতদিন,

সেই সময়ে কত পরিশ্রম করেছিলি! তাের সম্পর্কে ওঁর খুব ভাল ধারণা

আমি বললাম সে আমি জানি না

তিনি বললেনঃ যাই হােক, ওকে সঙ্গে নিয়ে যা

আর তাের নিজের জন্যও নতুন কাপড় নিয়ে যা

দুজনে গঙ্গাস্নান করে উদ্বোধনে গিয়ে শরৎ মহারাজের সঙ্গে দেখা করবি, বলবি,

বাবুরাম মহারাজ আমাদের পাঠিয়েছেন ;

আপনাকে বলেছেন মাঠাকরুনের কাছে আমাদের দীক্ষার কথা বলতে আর সেইমতাে ব্যবস্থা করতে

স্বামী ব্রহ্মানন্দের কাছে আমি পথনির্দেশের প্রার্থনা জানিয়েছিলাম।

আনুষ্ঠানিক দীক্ষার প্রার্থনা অবশ্য জানাইনি।

তবে আধ্যাত্মিক জীবন গঠনের জন্য তাঁর উপদেশ চেয়েছিলাম।

তাছাড়া এই মঠে তারই সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়।

তাই তাঁর নিকট দীক্ষালাভের একটি আকাঙ্ক্ষাও মনে থেকে গিয়েছিল।

কিন্তু বাবুরাম মহারাজ এমনভাবে জোর করেছিলেন যে,

আমার আর অন্যথা করার উপায় ছিল না।

তিনি বলেছিলেন

  1. আমার উপর তাের বিশ্বাস নেই ?
  2. তুই আমাকে ভালবাসিস না ?

দ্যাখ, তাের ভালর জন্যই বলছি,

তুই মায়ের কাছে দীক্ষা নে

এই কথার উত্তরে আমি কি বলব ?

বুঝেছিলাম যা স্থির হয়েছে,

তা আমাকে মেনে নিতে হবে এবং মেনে নেওয়াই উচিত।

তাঁর আদেশ অমান্য করা আমার পক্ষে ছিল অসম্ভব

অতএব যথাসময়ে উদ্বোধনে গিয়ে পূজনীয় শৱৎ মহারাজের কাছে সব কথা নিবেদন করলাম।

তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন ?

হ্যা, হ্যা, নিশ্চয় হবে।

তিনি শ্রীশ্রীমায়ের কাছে আমাদের নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়ে আমি যে

পূজনীয় শশী মহারাজের সেবা করেছি সেকথাও বললেন।

শ্রীশ্রীমা সব কথা শুনে বললেন

হ্যা, বাবা, তােমার দীক্ষা হবে।

যাও, বাবা, নিচে গিয়ে বসাে, পরে ডেকে নেব।

বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ ও তাঁদের স্মৃতিমালা। স্বামী অভয়ানন্দ

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২
তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

যথাসময়ে দীক্ষা আরম্ভ হলাে এবং একে একে আমাদের ডাক আসতে লাগল।

প্রথমে আমার সঙ্গীর ডাক এলাে, তারপর আমার ।

মা ছিলেন উদ্বোধনের যে-ঘরে এখন শ্রীশ্রীঠাকুরের পূজা হয় সেই ঘরটিতে।

শ্রীশ্রীমা ঘােমটা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন সব সময়ে।

আজ কিন্তু ঘােমটা ছিল না আসন পাতা ছিল।

ঘরে ঢুকে সেই আসনে বসলাম।

আসনে বসার কিছুক্ষণ পরে শ্রীশ্রীমা আমাকে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন।

যতদূর মনে পড়ে, আমার ইষ্ট সম্বন্ধে বা ঐরকম কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন।

আমি বলেছিলাম আমার কি ভাল লাগে,

কি ভাল লাগে না তা তাে জানি না।

আপনার যা ভাল মনে হয় তা-ই আমাকে দিন, মা।’

মা বললেন : তা-ই হবে।

এরপর তিনি কিছুক্ষণ ধ্যান করলেন, তারপর আমাকে মন্ত্র দিলেন।

আমি অবাক হয়ে গেলাম।

দেখলাম, এতদিন যে-ভাব নিয়ে আমি আছি ঠিক সেই ভাব অনুযায়ী তিনি মন্ত্র দিয়েছেন।

আমি তাে শ্রীশ্রীমাকে আমার পছন্দঅপছন্দের বিষয়ে কিছু জানাইনি।

তাঁর ইচ্ছামতাে মন্ত্র দিতেই অনুরােধ করেছিলাম।

আমার পছন্দ তাে কত রকমেরই হতে পারে,

কিন্তু কী আশ্চর্য,

বিশেষ যে-ভাবটি নিয়ে এতদিন অগ্রসর হচ্ছিলাম মা আমাকে ঠিক সেই ভাব অনুযায়ী মন্ত্র দিলেন!

মা-ঠাকরুন তাঁর দিব্যদৃষ্টিতে আমার মনের কথা ঠিক জেনে নিয়েছেন।

এর ফলে আমার মনে খুব তৃপ্তি ও আনন্দ হলাে।

এইভাবে আমার দীক্ষা হলাে।

দীক্ষার পরেও আমি বেলুড় মঠেই আছি।

গঙ্গার এপারে আছি আমরা, ওপারে শ্রীশ্রীমা আর তার লীলাসঙ্গী ও সঙ্গিনীরা।

এখনকার মতাে তখন ইচ্ছামতাে মঠ থেকে বেরিয়ে কোথাও যাতায়াত করা যেত না।

তাছাড়া মঠের গাড়িও ছিল না।

কাজেই ইচ্ছা হলেই শ্রীশ্রীমাকে যে দর্শন করব, সেটি তখন সম্ভব ছিল না।

তবে যখন বাবুরাম মহারাজ আমাকে কোনও কাজের জন্য কোলকাতায় পাঠাতেন,

তখনই বলে দিতেন ও মায়ের বাড়িতে প্রসাদ পাবে আর ওখানে গিয়ে শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করবে।

মা-ঠাকরুনকে প্রণাম করা ছিল আবার একটি সমস্যা।

সর্বদা তাকে মহিলারা ঘিরে থাকতেন।

তাই প্রথমে দর্শনের কথা পূজনীয় শরৎ মহারাজকে বলতে হতাে;

তিনি রাসবিহারী মহারাজকে (স্বামী অরূপানন্দকে) বলে দিতেন;

রাসবিহারী মহারাজ ভক্তদের মায়ের কাছে নিয়ে যেতেন।

এই ছিল নিয়ম  শ্রীশ্রীমা ও মহিলা-ভক্তদের অসুবিধা হবে।

স্বামী অভয়ানন্দ(ভরত মহারাজ)

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২
তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

ভেবে দর্শনের কথা বলতে আমার একটু অস্বস্তি হতাে।

যাই হােক, বাবুরাম মহারাজের নির্দেশ অনুসারে

শরৎ মহারাজের কাছে গিয়ে দর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করতাম এবং

ক্রমে ব্যবস্থা হয়ে যেত।

 শ্রীশ্রীমায়ের ঘরে গিয়ে দেখতাম তার মুখ লম্বা ঘােমটায় ঢাকা।

 মঠ থেকে এসেছি শুনে মাথার কাপড় একটু সরিয়ে জিজ্ঞেস করতেন ঃ

  • বাবা, মঠ থেকে এসেছ ?
  • বাবুরাম কেমন আছে ?
  • তারক (মহাপুরুষ মহারাজ) কেমন আছে ?

পরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মঠের প্রত্যেকের কুশল-সমাচার নিতেন-ভৃত্যদেরও।

মাকে সব বলতে হতাে।

কিন্তু এই রকম দর্শন ঘটত বিশেষ কোন কাজের উপলক্ষে এবং

সেরকম উপলক্ষও কুচিৎ-কদাচিৎ পাওয়া যেত।

শ্রীশ্রীমায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসার অথবা

সেখানে তাঁর পরিমণ্ডলে দিনযাপনের সুযােগ আমার কখনও হয়নি।

শ্রীশ্রীমাকে একবার দুর্গাপূজার সময়ে বেলুড় মঠে দেখেছি।

সেবার পুজার সময়ে পজনীয় রাখাল মহারাজ মঠে ছিলেন না।

মহাপুরুষ মহারাজ এবং তুরীয়ানন্দ স্বামীও ছিলেন না।

উৎসব-আয়ােজনের সবকিছুর মূলে ছিল বাবুরাম মহারাজের প্রেরণা।

তিনিই প্রধান উদ্যোক্তা।

আর পূজার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করেন জনৈক ভক্ত।

তখন কোলকাতা থেকে নৌকায় প্রতিমা আনা হতাে।

পূজা হতাে শ্রীরামকৃষ্ণের পুরানাে মন্দির আর মঠবাড়ির মাঝের জায়গায়।

ঐ জায়গাটা বাঁশ দিয়ে ঘিরে উপরে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতাে।

সেবারও সেইখানেই পূজা হলাে।

যতদূর মনে পড়ছে, তন্ত্র ধারক হয়েছিলেন পূজনীয় শশী মহারাজের বাবা ঈশ্বরচন্দ্র চক্রবর্তী।

মহাসমারােহে এবং মহানন্দে পূজা অনুষ্ঠিত হলাে।

একদিন সমাগত সব ভক্তের প্রসাদ পাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।

অবশ্য এখনকার তুলনায় তখন ভক্তের সংখ্যা অনেক কম ছিল।

বাবুরাম মহারাজ আর একদিন বেলুড় মঠের নিকটবর্তী অঞ্চলের

যেসব জেলে গঙ্গায় মাছ ধরত তাদের সকলকে খাওয়ানাের ব্যবস্থা করেছিলেন।

এই জেলেদের নৌকা মঠের ঘাটের কাছেই থাকত

আর এরা প্রতিদিন মঠে কিছু মাছ দিয়ে যেত দাম না নিয়ে।

ওদের সেদিন তিনি আনন্দ করে ভরপেট প্রসাদ খাওয়ালেন।

গরীব এই মানুষগুলিকে শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রসাদ খাইয়ে তিনি পরম তৃপ্তি লাভ করতেন।

মানুষকে, বিশেষত গরীব মানুষকে, ঠাকুরের প্রসাদ খাইয়ে আনন্দলাভ—

এটি বাবুরাম মহারাজের অনন্য চরিত্রের একটি লক্ষণীয় দিক।

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ

তিনি ছিলেন বেলুড় মঠের ম্যানেজার স্বামী অভয়ানন্দ পর্ব ২

আরও পড়ুন

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী অভয়ানন্দ(ভরত মহারাজ)

 

Leave a Comment