শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,

তখন এই যুবক ভক্তেরা সব একত্রিত হলেন।

বারানগর মঠ(পর্ব)

“কয়মাস হইল, ঠাকুর ভক্তদের আকূল পাথারে ভাসাইয়া স্বধামে চলিয়া গিয়াছেন। “

ঠাকুরের শরীর যায় ১৬ আগস্ট, ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দ।

আর শ্রীম এই কথাগুলি লিখছেন ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দের ৭ মে।

অর্থাৎ প্রায় ন-মাস হল ঠাকুর শরীর ত্যাগ করেছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,

শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,
শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,

“অবিবাহিত ও বিবাহিত ভক্তেরা ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের 

সেবাকালে যে স্নেহসূত্রে বাঁধা হইয়াছেন তাহা আর ছিন্ন হইবার নহে।

হঠাৎ কর্ণধারের অদর্শনে আরোহিগণ ভয় পাইয়াছেন বটে,

কিন্তু সকলেই যে একপ্রাণ, পরস্পরের মুখ চাহিয়া রহিয়াছেন।…  

ছোকরা ভক্তেরা কাশীপুরের বাগানে থাকিয়া রাত্রি দিন (ঠাকুরের)  সেবা করিয়াছিলেন।

তাঁহার অদর্শনের পর অনিচ্ছাসত্ত্বেও কলের পুত্তলিকার ন্যায়

নিজের নিজের বাড়ি ফিরিয়া গেলেন।…. 

কিন্তু ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহাদের অন্তরে ত্যাগী করিয়া গিয়াছিলেন।” (শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত)

বস্তুত, রামকৃষ্ণ-সঙ্ঘ শ্রীরামকৃষ্ণই প্রতিষ্ঠা করে গেছিলেন।

একবার লেডি মিন্টো বেলুড় মঠ দেখতে এসে স্বামী শিবানন্দজীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন :

আচ্ছা, এই সব তো স্বামী বিবেকানন্দই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?

শিবানন্দজী উত্তর দেন: না, এ সঙ্ঘ আমরা করিনি,

ঠাকুরের অসুখের সময় তিনিই এই সঙ্ঘ সৃষ্টি করে গেছেন।

 

তখন এই যুবক ভক্তেরা সব একত্রিত হলেন

শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,
শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,

এর আগেও তাঁদের মধ্যে পরিচয় ছিল,

পরস্পরের বাড়িতে যাতায়াত ছিল– কিন্তু খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়নি তখনও।

শ্রীশ্রীমা বলছেন :

এতদিন এরা একজন আর একজনকে বলত,

‘ নরেনবাবু’ কেমন আছেন, ‘রাখালবাবু’ কেমন আছেন — এইরকম।

অর্থাৎ দূরত্ব আছে।

তাই ‘বাবু’ বলছেন আর ‘আপনি’ করে বলছেন।

কিন্তু ঠাকুরের অসুখের সময় তাঁরা দিনরাত

ঠাকুরের কাছে থেকে তাঁর সেবা করতে আরম্ভ করলেন

ক্রমশ তাঁরা পরস্পরের খুব কাছাকাছি চলে এলেন।

আর ‘আপনি’ করে ডাকেন না তখন–

‘তুই-তোকারি’ করেন,নাম ধরে ডাকেন।

আর শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখছি অসুস্থ শরীর নিয়েও

এঁদের মধ্যে ত্যাগের বীজ বপন করে দিচ্ছেন।

তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন তাঁদের উপর।

শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,
শ্রীরামকৃষ্ণ যখন অসুস্থ হয়ে কাশীপুরে এলেন,

এঁদেরকে ডেকে কখনও আলাদাভাবে, কখনওবা একত্রে নানারকম উপদেশ দিচ্ছেন।

আর এঁরা যে শুধু প্রাণ দিয়ে ঠাকুরের সেবা করছেন তা-ই নয়, সাধনভজনও করছেন।

বস্তুত, কোনটার উপর বেশি জোর বোঝা যায় না।

ঠাকুরের সেবা এবং সাধনভজন দুটোকেই তাঁরা সাধনা হিসেবে নিয়েছিলেন।

এই যুবকমন্ডলীর মধ্যমণি হলেন নরেন্দ্রনাথ।

দেখা যেত ঠাকুর  শ্রীরামকৃষ্ণ মাঝে মাঝেই তাঁকে নিভৃতে ডেকে অনেক উপদেশ দিচ্ছেন।

কি বলতেন জানা যায় না, তবে অনুমান করা হয়,

তাঁর অবর্তমানে কিভাবে এই যুবক ভক্তদের চালাতে হবে সেই সম্বন্ধেই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ  তাঁকে নির্দেশ দিতেন।

স্বামী সারদানন্দ বলছেন,

এই সময় ঠাকুরের ভালবাসার আকর্ষণ এবং

নরেন্দ্রনাথের আকর্ষণ এই দুয়ে মিলে আমাদের মধ্যে এমন একটা বন্ধন সৃষ্টি করেছিল,

যা এক পরিবারের লোকের মধ্যেও দেখা যায় না।

এই ভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের রোগশয্যাতেই রামকৃষ্ণ-সঙ্ঘ গড়ে উঠেছিল,

শ্রীরামকৃষ্ণই গড়ে তুলেছিলেন।

এই কাশীপুরেই বুড়োগোপাল মহারাজ ( পরে যাঁর নাম হয়েছিল স্বামী অদ্বৈতানন্দ)

ঠাকুরকে একদিন বললেন :

আমার ইচ্ছা, গঙ্গাসাগর মেলায় যেসব সাধু আসবেন তাঁদেরকে কিছু দিয়ে সেবা করি।

ঠাকুর বললেন :

নরেন, রাখাল, এদের মতো সাধু তুমি কোথায় পাবে?

এদের সেবা করলেই ঠিক ঠিক সাধুসেবা হবে।

বুড়োগোপালদাদা তখন ঠাকুরের কথা-অনুযায়ী 

  1. নরেন,
  2. রাখাল,
  3. বাবুরাম,
  4. নিরঞ্জন,
  5. যোগীন্দ্র,
  6. শরৎ,
  7. লাটু,
  8. তারক,
  9. কালী ও
  10. শশী–

এই দশজনকে দশটি গেরুয়া কাপড় ও রুদ্রাক্ষের মালা দিলেন, নিজেও নিলেন।

এইভাবে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ঠাকুর সুস্পষ্টভাবে ভবিষ্যৎ সঙ্ঘের সূচনা করে গেলেন।

 

(স্বামী লোকাশ্বরানন্দেরতব কথামৃতম্থেকে গৃহীত)

আরও পড়ুন

প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু

 

Leave a Comment