আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় স্বামী শিবময়ানন্দজী

আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয়  স্বামী শিবময়ানন্দজী
আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় স্বামী শিবময়ানন্দজী

আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় শ্রীমৎ স্বামী শিবময়ানন্দজী

ব্রহ্মলীন শ্রীমৎ স্বামী শিবময়ানন্দজী মহারাজের উদ্দেশ্যে সঙ্গীত শিল্পী এবং রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির এর প্রাক্তনী দেবপ্রসাদ সিনহা বাবুর স্মৃতি চারণ স্বামী শিবময়ানন্দজী 🙏🙏🙏

আজ শ্রদ্ধেয় রণেন মহারাজ (স্বামী শিবময়ানন্দজী) শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলোকে গমন করেছেন।

তাঁর শ্রীচরণে শতকোটি প্রণাম🙏🙏🙏

মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৭৫ সালে ঊচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে শিবপুর বিই কলেজে ভর্তি হওয়ার এক সপ্তাহ পর ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করবার মনস্থির করি।

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ও বেলুড় রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দির – এই দুই কলেজেই ভর্তির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

রণেন মহারাজ তখন বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ, আমার বাবাকে বললেন

“ও তো আমার বিষয় (অঙ্ক) নিয়ে পড়তে চাইছে, নরেন্দ্রপুরে যাওয়ার দরকার নেই, ও কে এখানেই ভর্তি করিয়ে দিন।”

এই প্রসঙ্গে জানাই, উনি অঙ্কে স্নাতকোত্তর ছিলেন।

আমার বাড়ি ব্যান্ডেলে বলে আমিও দূরের নরেন্দ্রপুরে ভর্তি না হয়ে মহারাজের কথা মতন বেলুড় বিদ্যামন্দিরেই ভর্তি হয়ে গেলাম।

মহারাজ যতটা কঠোর তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি স্নেহপ্রবণ ছিলেন।

জানি না কেন, মনে হতো আমাকে একটু বেশিই স্নেহ করতেন।

বিদ্যামন্দিরে পড়ার সময় মাঝে আমি মানসিক ভাবে একটু বিপর্যস্ত ছিলাম কোনোও এক বিশেষ কারণে।

রণেন মহারাজ তখন আমার জন্য যথেষ্ট চিন্তিত ছিলেন ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন,

প্রতিদিন সকালে আমাদের ভবনের প্রার্থনার পরে আমার ভবনের সুপার মহারাজ যেন তাঁর সাথে আমাকে নিয়ে মঠে যান এবং

  • ঠাকুর,
  • মা,
  • স্বামীজি,
  • স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজীর মন্দিরে,
  • ও দূর থেকে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর মন্দিরকে

প্রণাম করে পুরো মঠ প্রদক্ষিণ করে আবার হোস্টেলে ফিরে এসে তারপর যেন পড়তে বসি।

আজ মহারাজের সাথে কতো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।

একবার কলেজে আমাদের ভবনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বামীজির উপর এক গীতিআলেখ্য পরিবেশন করেছিলাম –

অনুষ্ঠানের শেষে মহারাজ খুব খুশি হয়ে আমাকে ঠাকুরের লকেটসহ একটি গলার চেইন উপহার দিয়েছিলেন।

যা আমার জীবনে এক অমূল্য পাওয়া।

আর একবার গরমের ছুটিতে আমি কোনো একটা কাজে কলেজে গিয়েছিলাম।

সন্ধ্যা বেলায় প্রার্থনার শেষে মহারাজ বললেন,

“দেবপ্রসাদ, কয়েকটা গান করো, আমি তবলা বাজাচ্ছি।”

বড়োই মধুর সেই স্মৃতি।

আমাদের বিদ্যামন্দিরের সামনের রাস্তার অপরপ্রান্তে একটি ব্যাঙ্ক ছিলো।

তার দ্বিতলে মহারাজ থাকতেন।

মহারাজের একটা টেলিস্কোপ ছিলো।

আমাকে কয়েকবার রাতের দিকে ডেকে আকাশের নক্ষত্রের অবস্থান দেখাতেন।

আরও অনেক অনেক কথা মনের মধ্যে ভীড় করে আসছে।

শেষ দেখা হয়েছিলো বছর পাঁচেক আগে বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন অনুষ্ঠানে।

🙏🙏🙏 প্রণাম মহারাজ 🙏🙏🙏

আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় স্বামী শিবময়ানন্দজী
আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় স্বামী শিবময়ানন্দজী

প্রাক্তনী ব্রজকিশোর ঘোষ বাবু স্মৃতি চারণ করছেন _ আমাদের রণেন মহারাজ

উনি রহরা রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র ছিলেন।

আমাদের রণেন মহারাজ

আমার ৭০ চলছে। আগষ্টে পূর্ণ করে ৭১ এ পা দেব।

আমার ৮ বছর বয়স থেকেই যাঁকে গুরুর আসনে বসিয়ে ছিলাম, গতকাল রাতে তিনি এই পার্থিব জীবন থেকে চলে গেলেন।

এমন এক অতিমারী যে আমরা তাকে পেড়িয়ে যেতে পারছি না।

আমরা বোধহয় একজনও বলতে পারবোনা যে এই অতিমারী আমাদের পরিচিত আত্ম জনকে ছিনিয়ে নেয়নি।

সর্বশেষ সংযোজন শ্রদ্ধেয় মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী শিবময়ানন্দজী, আমার রণেন মহারাজ।

সবেমাত্র ক্লাস থ্রিতে উঠেছি।

১৯৫৯ এর মার্চের শেষদিক।

একদিন স্কুলের প্রার্থনার লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎই বড় মহারাজ একজন দারুণ সুদর্শন যুবককে নিয়ে এসে দাঁড়ালেন শিক্ষকদের লাইনে।

যুবকটি ধুতি ও শার্ট পড়ে আছে।

প্রার্থনার পরে বড় মহারাজ শ্রীমৎ স্বামী সুখদানন্দজী (শ্রী শ্রী মায়ের সন্তান) ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বললেন এই যে তোমরা দেখছো, ইনি তোমাদের স্কুলের নতুন হেডমাস্টার মশাই।

নাম ব্রহ্মচারী রণেন সেন।

আজকেই জয়েন করছেন মিশনে।

সম্ভবত সেটা সাতাশ বা ঊনত্রিশ মার্চ ১৯৫৯।

কত ছোট তখন কিছুই বুঝিনা।

কিন্তু কি এক গভীর দাগ চিরদিনের জন্য বুকের মধ্যে এঁকে দিয়ে গেল!

পরে আস্তে আস্তে শুনেছি উনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্কের (এম এস সি) ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট! এবং

তাঁর সহপাঠী ছিলেন নাকি পৃথিবী বিখ্যাত অ্যাস্ট্রো ফিজিসিস্ট ডঃ জে বি নারলিকার।

তাঁর আবার খুব দুঃখ ছিল জীবনে এবং তিনি নিজে বলেছেন এই ভাষায় তিনি সেটা ব্যক্ত করেছিলেন ‘রণেন যতদিন এখানে আছে,

তার থাকাকালীন আমি তো কোনদিন ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবো না।’

আরো পড়ুন

বায়োগ্রাফি শ্রীমৎ স্বামী শিবময়ানন্দ মহারাজ

19 photos of Swami Shivamayanandaji Maharaj

1 thought on “আমাদের রণেন মহারাজ অথাৎ পূজনীয় স্বামী শিবময়ানন্দজী”

  1. অপূর্ব এক স্মৃতি চারণা পড়লাম।।। প্রণাম।।।

    Reply

Leave a Comment