ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো

স্বামীজি তাঁর রচিত প্রথম স্তবটিতে(খণ্ডন ভব বন্ধন)
শ্রী রামকৃষ্ণের পারমার্থিক সত্ত্বার কথা বর্ণনা করেছেন প্রথম পাঁচটি স্তবকে।
তাঁর মানবীয় ভাবের প্রকাশ করেছেন ঐ স্তবের পরের চারটি স্তবকে।
ঈশ্বর নিরাকার ও সাকার,সেই জন্যই তাঁর দুই ভাবেরই বর্ণনা দিয়েছেন।
যুগবতার শ্রীরামকৃষ্ণের জীবন আলেখ্য যা স্বামীজি প্রথম স্তবটিতে দিয়েছেন,
সেইটিকে আদর্শ করে সাধনা করতে হবে। 

 ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো

ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো

তাঁর মধ্যে তিনি দেখেছিলেন সর্বপ্রকার দিব্য ভাবের প্রকাশ।

 

সকল মনোভাবের সাধক শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যে তাঁর নিজ নিজ আদর্শ খুঁজে পাবেন।

 

স্বামীজি শ্রীরামকৃষ্ণকে যুগবতার‘ বলেছেন।
তিনি এই যুগের জৃম্ভিত যুগ ঈশ্বর‘,
তিনি মানুষকে এই যুগের উপযোগী নতুন ভাব এবং নতুন সাধন প্রক্রিয়া দিয়েছেন।
তাঁর দিব্য জীবনই সাধকের পরম লক্ষ্য।
  • তিনি ত্যাগীশ্বর‘,
  • তাঁর শুদ্ধ পবিত্রভাব,
  • অহংশূন্যতা ,
  • সর্বপ্রকার বাসনাশূন্য জীবন,
  • তাঁর সর্বদাই ভগবৎভাবের তন্ময়ভাব এবং
  • সর্বোপরি তাঁর প্রেমিকমূর্তি আমাদের ধ্যানের বস্তু।
এটা আমাদের ধ্যানের লক্ষ্য হলেও সেই সাধনা অতন্ত্য দুঃসাধ্য ও প্রায় অসম্ভব।
*************************

শ্রীরামকৃষ্ণকে স্বামীজি বলেছেন,’অনন্ত ভাবময়

 ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
দ্বিতীয় স্তবে স্বামীজি শ্রীরামকৃষ্ণকেই সাধনার উপায় বলেছেন।
আমাদের প্রয়োজন শ্রীরামকৃষ্ণ সাধনা।
আমরা জানি ঈশ্বরই সর্বশক্তিমান এবং তিনিই এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই সব হয়েছেন।
কথামৃতে ঠাকুর এ কথা অনেকবার বলেছেন।
প্রকৃত ভক্ত অহংকার শুন্য হয়ে তাঁর শরণাগত হলে তিনি সব করে দেবেন।
কথামৃতে পাই,’ঈশ্বরের শরণাগত হও সব পাবে।
ঈশ্বরের শরণাগত হয়ে তাঁকে  ডাকলে তিনি সব সুযোগ করে দেবেন।
ঈশ্বরের শরণাগত হলে আর ভয় নাই,তিনিই রক্ষা করবেন।
ঈশ্বরের শরণাগত হলে কর্মক্ষয় হয়।
 ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
এই শরনাগতির ভাবকে দৃঢ় ভাবে আমাদের বুদ্ধিতে স্বামীজি মুদ্রিত করে দিয়েছেন।
তিনি তাঁর বক্তৃতায়,লেখায় ও কথাবার্তায় বিভিন্ন যোগের সাধনার দ্বারা অধ্যাত্ম জ্ঞান
লাভ করার উপদেশ দিয়েছেন।
এই স্তোত্রের চারটি স্তবকে তিনি কেবল শরনাগতির সাধনার কথা বলেছেন।
প্রত্যেকটি স্তবে শেষে একটি মাত্র সাধনা:
তস্মাৎ ত্বমেব শরনং মম দীনবন্ধো
এই স্তোত্রে আর একটি অত্যন্ত মূল্যবান জ্ঞানের কথা পাই।
সেটি হলো শ্রীরামকৃষ্ণের নাম মহিমার কথা।
শ্রী রামকৃষ্ণের নাম মহাত্মের কোথায় এই স্তোত্রেরএকমাত্র উদ্যেশ্য।
ওঁ নমো ভগবতে রামকৃষ্ণায়
এই দ্বাদশাক্ষরী নামই আমাদের জীবনকে পরিপূর্ণভাবে সার্থক করবে।
তাঁর নাম ” শান্তং শিবং সুবিমলং তব নাম নাথ‘ 
জপ করলে আমরা সকলেই চির কৃতার্থ হব।
ভক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে
তাঁর পবিত্র নাম জপ করলে জীবন ধন্য হবে এবং
আমাদের উপর তাঁর কৃপা হবে।

আবার বলিতেছেন, —

  • যতক্ষণ আমাদের মনুষ্যদেহ আছে ,
  • ততক্ষণ আমরা ঈশ্বরের যদি ফুল চন্দন দিয়ে পূজা করি,
  • তবে একমাত্র অবতারপুরুষকেই করিতে হইবে।

হাজার লম্বা লম্বা ,বড় বড় কথা কও, ঈশ্বরকে মনুষ্যরূপ ব্যতীত আর চিন্তাই হয় না।

তোমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি দ্বারা ঈশ্বরের স্বরূপ আবোল-তাবোল কি বলিতে চাও?

তুমি যাহা বলিবে, তাহার কিছুই মূল্য নাই।

তাঁর কথামৃতে পাই ” নাম কর আর সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থনা করা যাতে ঈশ্বরেতে অনুরাগ হয়।
নামের খুব মাহাত্ম আছে বটে কিন্তু অনুরাগ না থাকলে কি  হয়?”
  “ঈশ্বরের জন্য প্রাণ ব্যাকুল হওয়া দরকার।
নামে বিশ্বাস কর,তাহলে আর তীর্থাদির প্রয়োজন হবে না,ইত্যাদি।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস স্বামীজি রচিত এই মহান ও অপূর্ব আরতি স্তবের
অন্তর্নিহিত ভাবের বিরাট মহিমা ও সম্ভাবনার বিষয় অনুধাবন করে
তাঁর নাম জপের মাধ্যমে জীবনে আমরা কৃতকৃতার্থ হবো।

ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো।
ন-ক্তন্দিবং সকরুণং তব পাদপদ্মম্‌।
মো-হঙ্কষং বহুকৃতং ন ভজে যতোঽহং
তস্মাত্ত্বমেব শরণং মম দীনবন্ধো ! ১ ৷৷

 ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
ওঁ হ্রীং ঋতং ত্বমচলো গুণজিৎ গুণেড্যো
।।প্রণাম ঠাকুর।।

স্বামীজী আরতির পর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রণাম শিখাইয়াছেন।

উহাতে ঠাকুরকে অবতার শ্রেষ্ঠ বলিয়াছেন!

ওঁ স্থাপকায় চ ধর্মস্য সর্বধর্মস্বরূপিণে।
অবতারবরিষ্ঠায় রামকৃষ্ণায় তে নমঃ ৷৷

হাত ধুয়ে হাত জোড় করে পাঠ করবেঃ

ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ

দিবীব চক্ষুরাততম্।

ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।

।।লেখাটা  নিউইয়র্ক বেদান্ত সোসাইটির স্বামী তথাগতানন্দ মহারাজের ।।
আরও পড়ুন

Leave a Comment